সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, যিনি সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে জর্জ বুশের প্রধান সঙ্গী ছিলেন, স্বীকার করেছেন ইরাকে সামরিক হামলার কারণেই ইসলামিক স্টেটের উদয় হয়েছে।
কিন্তু মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিএনএনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে ইরাক যুদ্ধের জন্য তিনি কোনও রকম অনুশোচনা বা দুঃখ প্রকাশ করেননি।
ইরাক যুদ্ধের পক্ষে সংসদের সমর্থন আদায় করতে তিনি মনগড়া তথ্য দিয়েছিলেন কি না, তা নিয়ে মি ব্লেয়ারের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
ওই সাক্ষাৎকারে মি ব্লেয়ার বলেছেন, সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরাতে যারা জড়িত ছিলেন ইরাকের আজকের পরিস্থিতির জন্যে তাদেরও কিছু দায়ভার আছে।
কারণ ‘যুদ্ধ শেষে পরিস্থিতি কোন দিকে যেতে পারে সে বিষয়ে তাদের বোঝার কিছু ভুল হয়েছিল’।
ইরাক যুদ্ধের কারণে ইসলামিক স্টেইটের উত্থান ঘটেছে বলে যে ধারণা করা হয় তার মধ্যে কিছু সত্যতা আছে বলেও তিনি স্বীকার করেছেন।
তবে এবারেও তিনি যুদ্ধের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। বলেছেন, সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরানোর মধ্যে দুঃখ প্রকাশের কিছু নেই।
ইরাক যুদ্ধে ব্রিটেনের অংশগ্রহণের ব্যাপারে যে তদন্ত চলছে, তার একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে টনি ব্লেয়ার মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিএনএনকে এসব কথা বলেন।
ইরাক যুদ্ধের কারণেই জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেইটের উত্থান হয়েছে কি না এই প্রশ্নের জবাবে মি. ব্লেয়ার বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখানে কিছু সত্যতা আছে। তবে আমি মনে করি এবিষয়ে আমাদেরকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। তা নাহলে আজকের ইরাক ও সিরিয়াতে কি ঘটছে সেটা বুঝতে আমরা ভুল করবো।’
‘অবশ্যই আপনি বলতে পারেন না যে আমরা যারা ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছি, ২০১৫ সালের পরিস্থিতির জন্যে তাদের কোনো দায়ভার নেই।’
‘তবে এটাও মনে রাখা জরুরি,২০১১ সালে যে আরব বসন্ত শুরু হয়েছিলো, আজকের ইরাকের ওপর তার একই ধরনের প্রভাব পড়তে পারতো। আর দ্বিতীয় কথা হলো- আইসিসের পরিচিতি ইরাক থেকে নয়, সিরিয়া থেকেই তৈরি হয়েছে’, যোগ করেন মি ব্লেয়ার।
টনি ব্লেয়ার বলেন, তার নীতি ইরাকে কার্যকর হয়নি ঠিকই, একই সাথে যুদ্ধের পরে যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তাতেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।
তার মতে, যুদ্ধ না হলেও দেশটি আজকের সিরিয়ার মতোই গৃহযুদ্ধে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতো। তিনি বলেন, যুদ্ধের পর একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনে আন্তর্জাতিক জোট ইরাককে সহযোগিতা করেছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দেশটিতে ফিরে আসা স্থিতি নষ্ট হয়ে যায় গোষ্ঠীগত সংঘাতের কারণে, আর সেটা হয়েছে তৎকালীন ইরাকি সরকারের নীতি ও আরব বসন্তের কারণে।
বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, মি. ব্লেয়ার এসব বিষয়ে আগেও দুঃখ প্রকাশ করেছেন কিন্তু যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি কোনো দুঃখ প্রকাশ করেননি।